ধর্মেন্দ্র দেওল ১৯৩৫-২০২৫

Spread the love

পরিচয় ও প্রারম্ভিক জীবন

ধর্মেন্দ্র কৃষণ দেওল জন্মগ্রহণ করেন ৮ ডিসেম্বর ১৯৩৫  সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে নাসরালি গ্রামে।তিনি পড়াশোনা করেছিলেন লুধিয়ানা ও পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৫৪ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই প্রথম বিবাহ হয় তাঁর—প্রকাশ কউরের সঙ্গে।  এরপর ভালোবাসা ও চলচ্চিত্রের মাঝে বাঁধ তৈরি হয় যখন তিনি মুম্বাই এসে অভিনয়ের পথ ধরেন।

চলচ্চিত্রে যাত্রা

ধর্মেন্দ্রর প্রথম বড় ফিল্ম ছিল ১৯৬০ সালে Dil Bhi Tera Hum Bhi Tere (ডিল ভি তেরা হুম ভি তেরে) — যা দিয়ে তাঁর বলিউডে প্রবেশ।  এরপর তিনি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন রোমান্টিক হিরো হিসেবে, ১৯৬০-এর দশকে তিনি বিভিন্ন রিলেশনশিপ–ভিত্তিক ছবিতে কাজ করেন।

তবে আসল খ্যাতি আসে ১৯৭০-এর দশকে, যখন তিনি অ্যাকশন হিরোর ইমেজ গড়ে তুলেন।  তাঁর দীর্ঘসময় ধরে চলা ক্যারিয়ারে তিনি একাধিক থিম-রোলেও অভিনয় করেছেন — রোমান্স, কমেডি, সামাজিক নায়ক, এবং অ্যাকশন হিরো—সবকটিতে তাঁর দক্ষতা ছিল সমানভাবে।

ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক পরিমণ্ডল

ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে হিমা মালিনী (Hema Malini)-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় এবং তাঁরা পরবর্তীতে বিবাহিত হন।  তাঁর দুই পুত্র—Sunny Deol ও Bobby Deol —ও বলিউডে সফল হয়।

২৪ নভেম্বর ২০২৫: এক যুগের সমাপ্তি

আজ, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ধর্মেন্দ্র আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ৮৯ বছর বয়সে, মুম্বাইতে।  তাঁর প্রস্থানকে বলা হচ্ছে—ভাৰতীয় সিনেমার এক যুগের অন্ত্য।

চলচ্চিত্রজীবনের বিশেষ দৃষ্টিপাত

ধর্মেন্দ্রর ছবির তালিকা অসংখ্য — ৬০ বছরেরও বেশী ক্যারিয়ারে তিনি ৩০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন।  এখানে তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ধাপ ও ছবির কথা আলোচনা করা হলো।

১) ১৯৬০–৬৯: রোমান্স ও সামাজিক ছবির নায়ক

১৯৬০: Dil Bhi Tera Hum Bhi Tere — ধর্মেন্দ্রর ডেবিউ।

১৯৬৪: Ayee Milan Ki Bela — তাঁর প্রথম বড় সফলতা।

১৯৬৬: Phool Aur Patthar — এই ছবিতে তিনি অ্যাকশন ও রোমান্টিক দুই রকমের পরিচয় দিয়েছিলেন।

২) ১৯৭০–৭৭: সুপারস্টার হিরো

১৯৭১: Mera Gaon Mera Desh — একদম হিট, ধর্মেন্দ্রকে অ্যাকশন হিরোরূপে শীর্ষে নিয়ে যায়।

১৯৭৫: Chupke Chupke ও Sholay — দুইটি চিত্রনায়ক হিসেবে পার্থক্যপূর্ণ রোল ও জনপ্রিয়তা।

Sholay আজও এক ক্লাসিক, এবং ধর্মেন্দ্রর ক্যারিয়ারে এক বিশাল অংশ।

একই সময়ে কমেডি, রোমান্স ও অ্যাকশন — তিন ধরনের ছবিতেই সফলতা পেয়েছিলেন তিনি।

৩) ১৯৭৮–৯৭: স্টাইল পরিবর্তন

এই সময়কালে বলিউডে কনস্ট্রাকশন বদলে যায়, নতুন ধাঁচের হিরো ও নতুন থিম আসে। ধর্মেন্দ্র তার অবস্থান ধরে রাখেন, যদিও পুরোপুরি আগের মত মাতৃত্বপূর্ণ নায়ক রূপে নয়।
উল্লেখযোগ্য: The Burning Train (১৯৮০) — বড় বাজেটের ছবি, পরে কাল্ট স্ট্যাটাস পেল।

৪) ১৯৯৮–২০২৫: চরিত্র-ভিত্তিক রোল এবং অবসরের পরবর্তী সময়

ধর্মেন্দ্র ধীরে ধীরে লিড হিরোর ভূমিকা থেকে সরে এসে চরিত্র-ভিত্তিক ভূমিকায় নজর দেন।

উদাহরণস্বরূপ: Pyaar Kiya To Darna Kya (১৯৯৮) — সালমান-কাজল-এর ছবিতে সহায়ক চরিত্রে।

তাঁর শেষ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে Ikkis (২০২৫) — যুদ্ধভিত্তিক এই ছবিটি ছিল তার শেষ রূপ, যদিও তিনি এর মুক্তি দেখেননি।

কিছু জনপ্রিয় ও স্মরণীয় ছবি

Bandini (১৯৬৩) — সামাজিক বিষয়ক, ধর্মেন্দ্র এখানে নায়ক নয় বড় চরিত্রে।

Seeta Aur Geeta (১৯৭২) — রোমান্স ও কমেডির সংমিশ্রণ, ধর্মেন্দ্র-হিমা মালিনী যুগের জায়গা করে নেয়।

Dost (১৯৭৪), Dharam Veer (১৯৭৭) — হিট পার্থক্যপূর্ণ ছবি।

ধর্মেন্দ্রের অবদান ও মর্যাদা

তিনি শুধু হিরো নন, ছিলেন সময়ের প্রতীক: প্রেমিক, যোদ্ধা, সাধারণ মানুষ — তিনটি রূপেই দর্শক-হৃদয়ে তাঁর জায়গা ছিল।

তাঁর রূপ, দৃঢ়তা ও উপস্থিতি বলিউডে “হি-ম্যান” উপাধি এনে দিয়েছে।

২০১২ সালে তিনি পেয়েছেন ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সাধারণ নাগরিক সম্মাননা, Padma Bhushan।

২০০৪–০৯ সময়ে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন, রাজনীতিতে অংশ নেন।

শেষ কথায়

প্রিয় ধুরন্ধর অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আজ আমাদের ছেড়ে গেলেন, কিন্তু তাঁর অভিনয়ের রথ, তাঁর হাসি, তাঁর দৃঢ় নায়কত্ব — সবই আমাদের সঙ্গে রয়ে যাবে। বলিউডে তাঁর সৃষ্টি করা গর্ব ও স্মৃতিচিহ্ন কখনও ম্লান হবে না। আজ তাঁর প্রয়াণ শুধু একটি ব্যক্তির না — এক সময়ের এক সমগ্র শিল্প, এক যুগের — শেষ বাঁক। শ্রদ্ধার সঙ্গে বিদায় জানাই তাঁকে।

আমরা প্রার্থনা করি — তুমি শান্তিতে থাকো, তোমার সৃষ্টি চিরকাল অমর হয়ে থাকবে হৃদয়ে। আমার শ্রদ্ধা, ধুরন্ধর ‘ধরম পাজি’-কে।

banglablogs.in ©️ 2025
All rights reserved

Leave a comment